বিশেষ প্রতিবেদক
যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অবশেষে নিজেদের সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সক্ষমতা দেখালো নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবদল। দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে প্রেসক্লাবের গলিতে সীমাবদ্ধ কর্মসূচী থেকে বেরিয়ে এবার মিছিল রাজপথ দখল করলেন নেতাকর্মীরা। তবে বরাবরের মত পুলিশের বাঁধাও ছিল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সেই বাঁধাকে উপেক্ষা করে দীর্ঘসময় নারায়ণগঞ্জের রাজপথ উত্তপ্ত রাখতে সক্ষম হয় যুবদলের নেতাকর্মীরা। তবে জেলা বিএনপির নেতারা অনেক দিন ধরে জম্পেস সভা-মিছিল করতে পারেনি। কেন্দ্রের নির্দেশে কোনরকম দায়সারাভাবে কর্মসূচী সারে তারা। দলের নেতাকর্মীরা মনে করে, যুবদলের কর্মকান্ড দেখে ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি।
রোববার জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শহরের জিমখানা ও প্রেসক্লাবে আলাদা দুইটি বর্নাঢ্য র্যালি বের হয়। তবে শহরের ২ নং রেলগেট এলাকায় পৌছুতেই লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয় যুবদল নেতাদের। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুরতেও দেখা যায় নেতাকর্মীদের। অথচ ইতিপূর্বে বিভিন্ন সভা সমাবেশে পুলিশ বাধা দিলে লেজ গুটিয়ে পালাতে দেখা গেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। এমনকি পুলিশের ধমক খেয়েই সটকে পরার ঘটনা ঘটেছে অহরহ। সেখানে কর্মীদের মাঝে পুলিশের বাধার বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যেন নিজেদের শক্তিমত্বাকে ফিরে আনছে বলে মনে করে দলের নেতাকর্মীরা।
এক্ষেত্রে নেতাদের দেখা গেছে দায়িত্বশীল ভূমিকায়। মিছিলে উপস্থিত মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সামনে দিয়ে পুলিশ ধাওয়া দিলে তিনি পাল্টা পুলিশের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, কেন যাব? তার এমন দৃঢ় প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে পুলিশ সদস্য সরে অন্যদের ধাওয়া করতে থাকেন। একই ভাবে পুলিশের লাঠিচার্জে ক্ষুব্ধ হয়ে আরেক কর্মী ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে দৌড়ে তাকে নিবৃত করেন দলটির সিনিয়র এই নেতা। তার এমন দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ গণমাধ্যমে ভাইরাল হলে কর্মীদের ভেতর থেকে উদ্দীপ্ত মন্তব্য পাওয়া যায়।
ঠিক একই চিত্র লক্ষ করা যায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের নেতৃত্বে বের হওয়া র্যালিতে। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়াতে গেলে সেখানে পুলিশ হটিয়ে দেয় নেতাকর্মীদের। তবে পুলিশের লাঠির সামনেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন তৈমূর আলম খন্দকার ও কাউন্সিলর খোরশেদ। কর্মীদের হাত থেকে টেনে ব্যানার ছিনিয়ে নিলে কয়েকজন এসে সেই ব্যানার পুলিশের হাত থেকে কেড়ে নিতে আসেন। তবে কর্মীদের শান্ত করেন কাউন্সিলর খোরশেদ। জাতীয় নির্বাচনের প্রায় ১০ মাস পর বিএনপির এমন জাগরণ কর্মীদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে অংশ নিতে আসা এক তৃণমূল নেতা বলেন, কর্মীদের সংগঠিত করতে পারে যোগ্য নেতারা। আজকে তৈমূর, সাখাওয়াত, ও খোরশেদ যে পরিমান কর্মীদের জড়ো করতে সক্ষম হয়েছে তার সিকিভাগও দলটির জেলা কমিটি জড়ো করতে পারে না। এর দায় দলের নয়, এর দায় নেতাদের। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবেই ধীরে ধীরে মন ভেঙ্গেছে কর্মীদের। তাদের মাধ্যমে আজকে প্রমাণ করে দেখালো কর্মীরা যে যোগ্য নেতার নেতৃত্বে যে কোন সময় দলের পুনরুত্থান ঘটানো সম্ভব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক অবস্থার দুর্নাম ঘুচিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে যেভাবে ৩ নেতা রাজপথে আলোড়ন তৈরী করলেন তা এককথায় চমকপ্রদ। প্রায় ১১ বছর যাবত দলের ক্রান্তিকালে কর্মীদের সাথে নিয়ে একত্রিত হওয়া নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবীদার এবং যোগ্য নেতৃত্বের কর্মফল।